ইন্টারনেট হলো ইন্টার কানেক্টেড নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক হচ্ছে মূলত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। আর তাই ইন্টারনেটকে বুঝতে কম্পিউটার হলে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেয়া প্রয়োজন।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
পাশাপাশি বা দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও রিসোর্স শেয়ারের জন্য স্থাপিত আন্তঃসংযোগ বিশিষ্ট সমন্বিত ব্যবস্থাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা হয়। কম্পিউটারে নেটওয়ার্কের ফলে নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটার একই সিস্টেমের আওতায় আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ অংশ সমন্বিত হয়ে একটি প্রক্রিয়াকরণ অংশে পরিণত হয়। ষাটের দশকে মিমি ও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রথম নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে আশির দশকের গোড়ারদিকে পার্সোনাল কম্পিউটারের (PC) মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুবিধা
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত একটি কম্পিউটার অপর কম্পিউটারের রিসোর্স যেমন- ফাইল, ফোল্ডার, প্রোগ্রাম, প্রিন্টার ইত্যাদি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। একই কক্ষ, ক্যাম্পাস বা এলাকায় অথবা একই ভবনে অবস্থিত কম্পিউটারের সাথে কম্পিউটারের সংযোগের জন্য লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। দেশ-বিদেশ বা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য টেলিফোন লাইন বা ডিসের মাধ্যমে কম্পিউটার যোগাযোগের জন্য ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এসব সুবিধার কারণে বর্তমানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সর্বত্র বিশেষ করে বড় আকারের অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
নোড, সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন এবং সংযোগ
নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারকে একটি নোড (Node) বলা হয়। যে নোড বা কম্পিউটার সেবা প্রদান করে তাকে সার্ভার এবং যে সকল নোড সেবা গ্রহণ করে তাদেরকে ওয়ার্কস্টেশন বলা হয়। নেটওয়ার্কে সাধারণত একটিমাত্র সার্ভার এবং কতগুলো ওয়ার্কস্টেশন থাকে। সার্ভারের সাথে ওয়ার্কস্টেশন গুলো সাধারণত ক্যাবলের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
সার্ভার
এটি অত্যন্ত শক্তিশালী, উচ্চতর ক্ষমতা এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটার। সার্ভার মূলত নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য কম্পিউটার গুলোকে ওয়ার্কস্টেশন নির্দিষ্ট সেবা প্রদান করে। এরমধ্যে রয়েছে ডিস্ক, স্পেস, প্রিন্টার, অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি শেয়ার করা।
ওয়ার্কস্টেশন
ওয়ার্কস্টেশন সব ধরনের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইন্টারফেস কার্ড এবং সংযোগ তারের মাধ্যমে সার্ভারের সাথে ওয়ার্কস্টেশন সংযুক্ত হয়। সার্ভার থেকে ডেটা নিয়ে ওয়ার্কস্টেশনে প্রক্রিয়াকরণ শেষে পুনরায় সার্ভারে রাখা সম্ভব। আবার সার্ভারে সংরক্ষিত ডেটা ওয়ার্কস্টেশনে লোড করা যায়।
আইএসপি (ISP)
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি ইন্টারনেট গ্রাহক ও নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারদের মধ্যে এক ধরনের মিডলম্যান। আইএসপি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক অপারেটরদের কাছ থেকে লাইন ভাড়া নিয়ে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের প্রদান করে। আইএসপি গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে তাদের নিজস্ব রাউজার ও সার্ভার ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া আইএসপি তার নিজ দায়িত্বে গ্রাহক ও ইউজারদের অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা এবং বিলিং করে থাকে।
গ্রাহক
গ্রাহক হচ্ছে ইন্টারনেট নামক স্থাপত্যের শেষ প্রান্তের উপাদান। গ্রাহক আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- বাসগৃহ, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। গ্রাহকেরা সাধারনত দুই ভাবে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারে। এর একটি হল ডায়াল-আপ সংযোগ, অন্যটি লিজড বা ভাড়া করা লাইন। ডায়াল-আপ সংযোগের জন্য একটি মডেম প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ভাড়া বা লিজড লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে হলে একটি সার্ভার কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.